Header Ads Widget

লোকনাথ ব্রহ্মচারী

 লোকনাথ ব্রহ্মচারী



 

লোকনাথ ব্রহ্মচারী হিন্দু ধর্মের একজন প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তার জন্ম ১৭৩০ সালে হয়েছিল এবং তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি ধার্মিক কর্মকাণ্ড এবং অধ্যাত্মিক অনুশীলনে নিরত ছিলেন।

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আশ্রম ছিলেন বারদী আশ্রম, যা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত ছিল। এই আশ্রমে তিনি ধার্মিক শিক্ষা ও সচেতনতা প্রচার করতেন। বাঙালি হিন্দু সমাজে লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও তার আশ্রম খুবই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং তারা তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও পূজা করতেন।

তার ধার্মিক বোধগম্য জীবনবিদ্যা এবং অন্যান্য উপদেশের মাধ্যমে লোকনাথ ব্রহ্মচারী অনেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে প্রভাবশালী হন। তার শিষ্যদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধায় গ্রহণ করা হত।

লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১৮৯০ সালে তার দেহত্যাগ করেন। তিনি আজও হিন্দু সমাজে অমর কীর্তির অংশ হিসাবে মনে করা হয়।

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বাল্য জীবন অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মানুষের মনে দৃশ্যমান শিক্ষা সাধনের সময় ছিল। তার পিতা রামনারায়ণ ঘোষাল একজন ধর্মপরায়ণ ও গুপ্তসাধক ছিলেন। তিনি তার সন্তানদের মধ্যে একজনকে ব্রহ্মচারী করার ইচ্ছা ছিলেন। তবে, মাতার মাধুর্যময় প্রেমে আবদ্ধ মা কমলা দেবী এই ইচ্ছায় সম্মতি দেননি। তারপরে তার চতুর্থ সন্তান লোকনাথের জন্ম হয়। মাতা কমলা দেবী নিজেই ব্রহ্মচারী হওয়ার সম্মতি দিয়েছিলেন।

লোকনাথের শিক্ষক হিসাবে আচার্য গাঙ্গুলী (ভগবান চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান ও সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত গৃহী সন্ন্যাসী। তাঁর উপনয়নে লোকনাথ ধার্মিক শিক্ষা এবং অন্যান্য মূল্যবান শিক্ষা প্রাপ্ত করেন। এই সময়ে লোকনাথের বয়স মাত্র ১১ বছর এবং আচার্য গাঙ্গুলীর বয়স তখন ৬০। এই সময়ে তিনি একটি বেদোক্ত নৈষ্ঠিক-ব্রহ্মচারী হয়ে গৃহস্থাশ্রম ত্যাগ করেন।

এই প্রাচীন শিক্ষার প্রণালী লোকনাথের প্রতিভার উন্নতি করেছিল এবং তিনি অত্যন্ত আধ্যাত্মিক জীবনে অগ্রসর হন। এই বাল্য জীবনের অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে লোকনাথের চরিত্র আরো উন্নত করে তুলেছে।

লোকনাথ ব্রহ্মচারী এবং তার সহশিষ্য বেণীমাধব চক্রবর্তী গৃহ ত্যাগের পর কালীঘাটের শক্তিপীঠে আচার্য গাঙ্গুলীর নিকট প্রাপ্ত শিক্ষা প্রাপ্ত করতে গিয়েছিলেন। তারা সাধনা এবং ভজনের শিক্ষা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাদের আচার্য গাঙ্গুলীর নির্দেশে কালীঘাট ত্যাগ করে নির্জন স্থানে যান। সেখানে তারা কঠোর সংযম এবং সাধনা পালন করেন। তারা দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে নক্ত-ব্রত (দিনে অনাহারী থেকে রাত্রে আহার) অনুষ্ঠান করেন। তারপরে একান্তরা-ব্রত (একদিন উপবাসের পর দিন আহার), ত্রিরাত্রি, পঞ্চহ, নবরাত্রি ব্রত অনুষ্ঠান করেন। এই সময়ে আচার্য গাঙ্গুলী তাদের ধ্যান ও যোগ শিক্ষা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সিদ্ধিলাভের জন্য তারা হিমালয়ের বরফাবৃত এক নির্জন স্থানে যান। পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় কঠিন তপস্যা ও সাধনার মাধ্যমে লোকনাথ ব্রহ্মচারী সমাধির উচ্চতম শিখরে পৌছে এবং পরমতত্ত্বের সিদ্ধি লাভ করেন। তখন তার বয়স ৯০ বছর।

লোকনাথ ব্রহ্মচারী এবং তার শিষ্যদের পরবর্তী ভ্রমণের লক্ষ্য হল মক্কা। তারা প্রথমে কাবুলে পৌঁছে মোল্লা সাদি নামক একজন মুসলিম ধর্মশাস্ত্রজ্ঞের সাথে ধর্মবিষয়ক আলোচনা করতে গিয়ে কুরআন শিক্ষা লাভ করেন। তারপর মদিনা যান। মদিনা থেকে তারা মক্কা যাত্রা করতে শুরু করেন। যাত্রার মধ্যে তারা আব্দুল গফুর নামক এক মুসলিম ফকিরের আশ্রমে গিয়ে ধর্মবিষয়ক আলোচনা করতে গিয়ে তাঁর সাথে পরিচয় করে। এই সময়ে লোকনাথ মুসলিম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শিক্ষা প্রাপ্ত করেন।

মক্কা পৌঁছার পর তারা মক্কার বিখ্যাত স্থানগুলি দর্শনের জন্য ঘুরে বেড়ায়। তাদের পথে 'আব্দুল গফুর' নামক এক প্রাচীন মুসলিম ফকিরের আশ্রমে পড়ে। সে সময়ে সে অনেক বয়সী ছিলেন এবং সবসময় ধ্যানমগ্ন এবং সমাধির অবস্থায় থাকতেন। লোকনাথ তাকে দেখে আশ্চর্য করে এবং তার সমাধিকে ভঙ্গ করে আলিঙ্গন করেন। তারপর তারা মক্কায় গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত কাবা দর্শন করতে গিয়ে তারাও কবরগাহে যান।

পরবর্তীতে তারা বারাণসীর কাশীধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এখানে তারা মহাযোগী ত্রৈলঙ্গস্বামীর আশ্রমে গিয়ে তাঁর সাথে যোগশিক্ষা করেন। বৃদ্ধ গাঙ্গুলী তার শিষ্যদ্বয়ের সমস্ত দায়িত্ব ত্রৈলঙ্গস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে গঙ্গার তীরে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মহাপ্রস্থান

লোকনাথ এবং তার শিষ্যদের ভ্রমণের সাথে এক অতীত যুগের অদৃশ্য পথ পালন করা হল। তারা ভারতের পশ্চিমে আফগানিস্তান, আরব, ইসরায়েল, পারস্য, ইউরোপ ইত্যাদি স্থানে যাত্রা করে এবং এটি শেষ করে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে। এরপর তারা ভারতে ফিরে পুনরায় উত্তরের দিকে গতিবহুল করে এগিয়ে গেলেন।

তাদের পথে বৃক্ষতলায় ধ্যানাসক্ত এক সন্ন্যাসীর সাথে পরিচয় হয়। তারা একসাথে আগের থেকে অনেক দূরে গিয়েছিলেন। লোকনাথ এবং তার সঙ্গীরা এই সন্ন্যাসীর সাথে যোগশিক্ষা করতে এবং পরিণতিশীল বাস্তবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।

তারা তাদের ভ্রমণের সফর চালিয়েছিলেন সাইবেরিয়ায়। সাইবেরিয়াতে সূর্যোদয় না হওয়ার কারণে সময় গণনা করা যায়নি। তারা বৃক্ষের শৃঙ্গের সাথে পরিচিতি পেয়েছিলেন এবং অল্প বছরেই প্রচুর বরফে আবৃত পথে ভ্রমণ করতে দেখেছিলেন। এক সময়ে তারা বরফের স্তম্ভের নিকটে গিয়ে অবস্থান করে। এটি তাদের ভ্রমণের শেষ।

পরে, তারা পূর্ব দিকে গেলেন এবং চীনে আসলেন। এখানে তারা বিভিন্ন পথে যাত্রা করে, ত্রৈলঙ্গস্বামীর পথে গতি করে, তিব্বতে এবং বদ্রীনাথে অবস্থান করে। পরে, লোকনাথ বারদীতে অবস্থান করতে যান। এখানে, তিনি সময়ের সাথে এবং প্রকৃতির সাথে একত্রিত হয়ে প্রাচীন প্রত্যক্ষ মার্গের মূল্যায়ন করতে শিখেন।

লোকনাথের জন্মস্থানের বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও, তিনি আশ্রমে মহাসমাধি লাভ করেন এবং তার মহাসমাধির সময়ে তাঁর বয়স প্রায় ১৬০ বছর ছিল। এই ঘটনার জন্য বারদী আশ্রম একটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে গণ্য হয়েছে।

জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক:
বাবা লোকনাথের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ জন্মস্থান রহস্যে আবৃত। 8ই এপ্রিল, ১৮৮৫-এ, টি. নেইলর, সহকারীর সামনে একটি আসল ডিক্রি (১৯৩৫ সালের ৮২ নং) নেওয়া হয়েছিল। ১৮৭২ সালের "প্রভিশন অ্যাক্ট X" এর অধীনে নারায়ণগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট যেখানে দৃশ্যত বাবা লোকনাথ একই কথা বলেছিলেন 


"My name is Lokenath Brahmachari. My father's name is Ram Narain Ghosal. I am by caste Brahman. My home is at Mouza Chakla, Thana zilla Barasat. I reside at present in Mouza Baradi. Thana Narainganj, Zilla Dacca, where I am preist."

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মস্থান এবং তার পিতার নামের সম্পর্কে বিভিন্ন উল্লেখগুলির মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে যা বিতর্কের কারণে হতে পারে। এই বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে প্রতিষ্ঠিত তথ্যের মধ্যে তালিকা প্রদান করা হয়েছে, এবং এগুলি আদালতের নথির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে প্রমাণিত হতে পারে।

বারদীর গোঁসাই: শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী গ্রন্থে লেখক বাংলায় উল্লেখ করেছেন যে, লোকনাথ ব্রহ্মচারী কাঁকড়া-কচুয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ১১৩৭ সালে হয়। তাছাড়া, লেখিকা জিতবতী দাস তার বই "বিশুদ্ধ প্রেম" তে উল্লেখ করেছেন যে লোকনাথ ব্রহ্মচারী অবিভক্ত বাংলায় কচুয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

লোকনাথ মিশনের 2011 বইয়ের স্বামীবাগ রোড শাখায়: শ্রদ্ধাঞ্জলি ১২১তম তিতিন দিবসে, বিষ্ণুপদ ভৌমিক আরও উল্লেখ করেছেন যে লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১৭৩০ সালে কচুয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

এই প্রকাশিত তথ্যগুলির ভিত্তিতে, লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মস্থান হতে পারে কচুয়া, যা বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত।

তবে, তার পিতার নামের বিষয়ে বিভিন্ন উল্লেখগুলির মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে, এবং এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন যাতে সঠিক তথ্য নির্ধারিত হতে পারে।

উক্তি
"রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও, আমিই রক্ষা করিব।"[১৮]
"বাক্যবাণ, বন্ধুবিচ্ছেদবাণ ও বিত্তবিচ্ছেদবাণ; এই তিনটি বাণকে সহ্য করিতে পারিলে মৃত্যুকেও হটাইয়া দেওয়া যায়"[১৯]
"এ আমার উপদেশের স্থল নয়, আদেশের স্থল

Post a Comment

0 Comments